আন্তর্জাতিক ডেস্ক : মিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে গুলি চালিয়েছে আইনশৃঙ্খলাবাহিনী। এতে কমপক্ষে দুই জন নিহত হয়েছে। দুই সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে চলা বিক্ষোভে এটিই সবচেয়ে বড় সহিসংতার ঘটনা।
বিভিন্ন প্রতিবেদন থেকে জানা যায় যে, মান্দালয় এলাকায় বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে তাজা গুলি ব্যবহার করে পুলিশ। এতে কমপক্ষে ২০ জন আহত হয়। খবর বিবিসির
মিয়ানমারের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহরটিতে একটি জাহাজ নির্মাণ কারখানার সামনে বিক্ষোভ করতে জড়ো হন হাজার হাজার মানুষ।
মান্দালয়ে ধর্মঘটে থাকা জাহাজ নির্মাণ কারখানার শ্রমিক এবং বিক্ষোভকারীদের মুখোমুখি হলে সহিংসতা শুরু হয়। খবরে বলা হয়েছে, বিক্ষোভকারীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে বিভিন্ন বস্তু ছুড়ে মারলে এর জবাবে তাজা গুলি এবং টিয়ার গ্যাস ছোড়ে পুলিশ।
ছবিতে দেখা যায় যে বিক্ষোভকারীরা তাদের উপর ছোড়া বুলেটের খালি কার্তুজ সংগ্রহ করেছেন। নিহতদের মধ্যে একজনের স্বজন বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছেন যে, তিনি একজন কাঠমিস্ত্রি ছিলেন এবং তার বয়স ছিল ৩৬ বছর। তার বুকে গুলি লেগেছিল। নিহতদের মধ্যে আরেকজন ১৮ বছরের কম বয়সী। তার মাথায় গুলি লাগে।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন বলছে যে তারা এই সহিংসতার ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছেন। মিয়ানমারে থাকা মার্কিন দূতাবাস বলেছে, তারা এ ঘটনায় ‘গভীরভাবে বিক্ষুব্ধ’।
যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডমিনিক রাব এক টুইটে বলেছেন, ‘মিয়ানমারের শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভাকারীদের উপর গুলির ঘটনা অগ্রহণযোগ্য। যারা গণতন্ত্রকে ধ্বংস করছে এবং ভিন্নমতের কণ্ঠরোধ করছে তাদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সাথে মিলে এ বিষয়ে আরো পদক্ষেপ নেয়ার বিষয়টি বিবেচনা করবো।’
মিয়ানমারে বড় বিনিয়োগকারী দেশ সিঙ্গাপুর হুশিয়ার করেছে যে, পরিস্থিতি জটিলতর হতে থাকলে তার পরিণাম মিয়ানমার এবং আশপাশের অঞ্চলের জন্য ভাল হবে না।
শুক্রবার একজন অল্পবয়স্ক নারী প্রথম বিক্ষোভে নিহত হন। গত ৯ ফেব্রুয়ারি রাজধানী নেপিদোতে এক বিক্ষোভে মিয়া থয়ে থয়ে খাইং নামে ওই নারী মাথায় গুলিবিদ্ধ হন। অধিকার রক্ষা সংস্থাগুলো বলছে যে, তাজা বুলেটেই আহত হয়েছিলেন তিনি। তবে প্রাণঘাতী শক্তি ব্যবহারের অভিযোগ নাকচ করে দিয়েছে পুলিশ।
সামরিক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে যে, গত পহেলা ফেব্রুয়ারি সেনা অভ্যুত্থান ঘিরে বিক্ষোভ শুরু হওয়ার পর থেকে এক জন পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছে।
শনিবার আরো বেশ কয়েকটি শহরে বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়। যার মধ্যে রয়েছে ইয়াঙ্গন যেখানে বাসিন্দারা বিভিন্ন ধরনের জিনিসপত্র বাজিয়ে প্রতিবাদ জানায়। এছাড়া মার্কিন দূতাবাসের বাইরে মোমবাতি জ্বালিয়ে প্রতিবাদ জানানো হয়।
সেনা অভ্যুত্থানের কারণে অং সান সু চির নেতৃত্বাধীন নির্বাচিত সরকারতে উৎখাত করা হয়েছে। বিক্ষোভকারীরা তার দল ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্রেসি-এনএলডির অন্য নেতাদের সঙ্গে সঙ্গে সু চিরও মুক্তির দাবি জানিয়েছে। অবৈধ ওয়াকি-টকি ব্যবহার এবং দেশটির প্রাকৃতিক দুর্যোগ বিষয়ক আইন অমান্য করার অভিযোগে গৃহবন্দী রয়েছেন তিনি।
সামরিক বাহিনী অভিযোগ তুলেছে যে, গত বছর যে নির্বাচনে এনএলডি ব্যাপক জয় পেয়েছিল তাতে জালিয়াতি হয়েছে। তবে এর পক্ষে কোন প্রমাণ দেয়নি তারা।